গত বছরের চেয়ে এবার চামড়ার দাম আরও কমেছে। আগের বছর যে চামড়া ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সে চামড়ায় এবার ১০০ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। চামড়ার প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
ফুলতলার সুপার ট্যানারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফিরোজ ভূইয়া বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী খুলনা বিভাগের কোনো চামড়া যাতে নষ্ট না হয়। চামড়ার যথাযথ দাম পরিশোধ করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমাদের এখানে চামড়া দিয়ে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আর আমাদের এ উদ্যোগের ফলে জাতীয় সম্পদ চামড়া নষ্ট হওয়া বা পাচার হওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে।’
ফিরোজ ভূইয়া জানান, ২০১৬ সালে তার ট্যানারিতে ১০ হাজার পিস চামড়া আসে। ২০১৭ সালে এখানে ৩০ হাজার পিস চামড়া পাওয়া যায়। ২০১৮ সালে প্রায় ৫০ হাজার পিস চামড়া আসে। ২০১৯ সালে আসে আড়াই লাখ চামড়া। এ ট্যানারিতে বর্তমানে চার লাখ পিস চামড়া মজুদ আছে।
ট্যানারিটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় দাবি করে তিনি বলেন, এখানে মাদ্রাসা থেকে চামড়া আসার পর তা প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
রূপসার কাজদিয়া মহিলা মাদরাসার শিক্ষক মো. আসাদুল্লাহ জানান, তিন-চার বছর আগে চামড়া তিন হাজার থেকে ৩২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। গত বছর তা ৫০০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। কিন্তু এবার আরও খারাপ অবস্থা।
শেখপাড়ার ইয়াসিন লেদারের মো. আবু জাফর বলেন, ‘এবার চামড়ার দাম গত বছরের চেয়েও কম। এবার ১৮-২০ বর্গফুটের চামড়া ১০০ টাকা ও ৩০-৩২ বর্গ ফুটের চামড়ার দাম ৫০০ টাকা দেয়া হয়েছে। গত বছর এ চামড়ার দাম ৩০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা ছিল। ট্যানারি মালিকরা গত চার-পাঁচ বছরের টাকাই এখনও পরিশোধ করেনি। এ কারণে ব্যবসায়ীরা সংকটের মধ্যে রয়েছেন। খুলনায় ৩০-৩২ জন ব্যাপারি রয়েছেন। সবারই টাকা বকেয়া আছে। আমার নিজেরই ১৫ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে।’
আমান লেদার কমপ্লেক্সের আমানুল্লাহ আমান বলেন, ‘ট্যানারিতে গত বছরের চামড়া মজুদ রয়েছে। তাই চামড়া নেয়ার আগ্রহ কম। আর ব্যবসায়ীদের টাকাও আটকে আছে ট্যানারি মালিকদের হাতে। ফলে ব্যবসায়ীরাও চামড়া কেনার মতো অবস্থায় নেই। এর সাথে আছে করোনার প্রভাব। সব মিলিয়ে এবার চামড়ার বাজার গত বছরের চেয়েও খারাপ।’
ট্যানারিতে তার ২০ লাখ টাকা পাওনা আছে বলে জানান তিনি।
কেডিএ মসজিদের খাদেম হাফেজ মো. রেজোয়ান জানান, তিনি দুটি চামড়া বিক্রি করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। প্রত্যাশা ছিল ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু মোট ৩০০ টাকা দাম পাওয়া গেল।
তিনি বলেন, ‘গত বছরের চেয়েও এবার চামড়ার দাম হতাশাজনক। এভাবে চললে এ দেশের চামড়া শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে।’
শেখপাড়া চামড়া পট্টিতে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে আসা অনেকে অভিযোগ করে বলেন, দাম নির্ধারণ ও রপ্তানির ঘোষণা দেয়ার পরও কোরবানির পশুর চামড়ার দামের বিপর্যয় ঠেকানো গেল না। খুলনায় গরুর চামড়া আকার ভেদে ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একেকটি ছাগলের চামড়ার দাম ১০-২০ টাকা।
বিভিন্ন মাদ্রাসার দান করা চামড়া বিক্রি করতে এসেও বিপাকে পড়েন কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্র-শিক্ষকরা কোরবানির ঈদের আনন্দ বাদ দিয়ে চামড়া সংগ্রহ করেছেন। এ বছর চামড়ার দাম যে হারে পাওয়া গেছে তাতে চামড়া সংগ্রহের যাতায়াত ব্যয় উঠানো কঠিন।